শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:২৫ অপরাহ্ন

আপডেট
ফুলপুরে নতুন ওসিকে বরণ ও আগের ওসিকে বিদায়ী সংবর্ধনা 

ফুলপুরে নতুন ওসিকে বরণ ও আগের ওসিকে বিদায়ী সংবর্ধনা 

ময়মনসিংহের

মো. আব্দুল মান্নান : ময়মনসিংহের ফুলপুরে নতুন ওসি আবুল খায়েরকে বরণ ও আগের ওসি মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুনকে বিদায়ী সংবর্ধনা প্রদান করা হয়েছে। শুক্রবার বিকাল পৌনে ৪টায় থানা প্রাঙ্গণে ওই সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শুরু হয়। শেষ হয় রাত ৭টায়। ফুলপুর থানার ওসি একই জেলায়, একই সংসদীয় আসন এলাকায় পার্শ্ববর্তী তারাকান্দা থানায় ও তারাকান্দা থানার ওসি ফুলপুর থানার ওসি হিসেবে যোগদান করেছেন। ৮ নভেম্বর জেলা পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মেদ ভূঞা পিপিএম (বার) সেবা স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে তাদের বদলির আদেশ দেওয়া হয়। এরপর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকে খবরটি প্রচার হয়। এ উপলক্ষে ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুনকে ফুলপুর অফিসার্স ক্লাবের পক্ষ থেকে বিদায়ী সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠন, মফস্বল সাংবাদিক সংগঠন ও বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের পক্ষ থেকে তাকে বিদায়ী সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এসব অনুষ্ঠানে ফুলপুরের মানুষের জন্য ওসির বহু উপকারের হিস্ট্রিসহ রক্তদানের বিষয়টিও উঠে আসে এবং ওসির ভূয়সী প্রশংসা করা হয়। শুক্রবারে থানা প্রাঙ্গণে আয়োজিত অনুষ্ঠানে  উভয় ওসিকে ফুলেল শুভেচ্ছা ও ক্রেস্ট উপহার প্রদান করা হয়েছে। এতে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ অংশ নেন।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই সুমন মিয়া। প্রথমেই কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন কনস্টেবল আব্দুল মালেক। এরপর বক্তব্য রাখেন গ্রাম পুলিশ যুগেশ। যুগেশের পর বক্তব্য রাখেন কনস্টেবল সিপন। তিনি বলেন, স্যারের কাছে এসআই বা কনস্টেবল এমন কোন বিভেদ পাইনি। তার নিকট থেকে অনেক অনুপ্রেরণা পেয়েছি। এরপর এএসআই শহিদুল বক্তব্য রাখেন। তিনি শুরু করেছিলেন ‘তুমি কেমন করে গান কর হে কবি, অবাক হয়ে শুনি’ লাইনটি দিয়ে। পরে এ প্রতিবেদক আসরের নামাজে চলে যাওয়ায় তার বক্তব্যসহ কয়েকজনের বক্তব্য রেকর্ড করা যায়নি। নামাজ থেকে ফিরে আসার পর বক্তব্য রাখেন তন্ময় এন্টারপ্রাইজের প্রোপ্রাইটর মো. বিল্লাল হোসেন। তিনি বলেন, আমরা কোন রাজনীতি করি না। ব্যবসা করি। থানায় আমাদের যাতায়াত হয় না। তারপরও হঠাৎ কোন কাজে আসলে ওসি স্যারের পক্ষ থেকে ভাল ব্যবহার পেয়েছি। নতুন ওসির কাছ থেকেও আমরা এই ব্যবহারটা প্রত্যাশা করি। এরপর ফুলপুর সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক কামাল হোসেন বলেন, ওসি মামুন ভাইয়ের ব্যবহার ছিল অমায়িক ও গর্ব করার মত। শিক্ষকদের তিনি অত্যন্ত সম্মান করতেন। যখনই  তার নিকট কোন লোক এসেছে, তার উপকার হয়েছে। বঞ্চিত হওয়ার কথা শুনিনি। এরপর বক্তব্য রাখেন, সিনিয়র সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম, শাহ নাফিউল্লাহ সৈকত, ফুলপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিকদের মুরুব্বি দি নিউ নেশন পত্রিকার ফুলপুর প্রতিনিধি মো. হুমায়ুন কবীর মুকুল। মুকুল তার বক্তব্যে বলেন, ভালবাসা পেতে হলে ভালবাসা দিতে হয়। মানুষের সেবা করতে হয়। এসব কাজ তিনি যথার্থভাবে করেছেন। এজন্যই সবাই তাকে ভালবাসেন। আশা করি নতুন ওসি তার চেয়েও ভাল করার চেষ্টা করবেন। এরপর বক্তব্য রাখেন উপজেলা ছাত্র লীগের সাধারণ সম্পাদক তানিম আহমেদ শাওন ও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি পরিতোষ দত্ত। পরিতোষ বলেন, জটিল জটিল সমস্যা তিনি খুব সহজেই সমাধান করে দিয়েছেন।
উনার কাছ থেকে আমরা বহু সেবা পেয়েছি। আমরা তার প্রতি খুশি। এরপর বক্তব্য রাখেন, ছনধরা ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, বওলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল বাতেন খান, পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক হামিদুল আলম বিপ্লব ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বাদশা আলমগীর। বাদশা বলেন, ওসির চেয়ার অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এখানে বসে মানুষের অনেক উপকার করা যায় আবার অনেক ক্ষতিও করা যায়। মামুন ভাই  উপকারই করে গেছেন। তাই তার প্রতি শ্রদ্ধা ও দোয়া রইলো। উত্তরোত্তর তার আরও মঙ্গল হোক। বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বাতেন সরকার বলেন, উনি ছিলেন সকলের হৃদয়ের মানুষ। তার কথা কি বলবো। অনেক উপকার তিনি করে গেছেন। সর্বশেষ আমাদের একজন মুক্তিযোদ্ধার বীর নিবাসের একটি ঘরের টাকা ফেরত যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। বার বার দরবার করে অবশেষে ঘরটি তিনি রক্ষা করেছেন। মামুন সাহেব সকলকে কাঁদিয়ে গেলেন, আপনি (নতুন ওসি) সকলকে হাসাবেন। এরপর আবেগঘন বক্তব্য দেন ফুলপুর থানার ওসি (তদন্ত) বন্দে আলী। তিনি বলেন, স্যারের এত ভালবাসা পেয়েছি, যা বলে  কোনদিন শেষ করতে পারবো না। আমার অসুস্থ স্ত্রীকে দেখতে তিনি আমাদের বাড়িতেও গিয়েছেন। আমাকে ছুটিসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা তিনি করেছেন। তার এত ভালবাসা আমি কোনদিনও ভুলতে পারবো না। স্যারকে আল্লাহ তায়ালা দীর্ঘ নেক হায়াত দান করুক। এরপর বক্তব্য রাখেন পৌর মেয়র মিঃ শশধর সেন। তিনি বলেন, থানায় আমার খুব কম আসা হয়েছে। তবে আমরা যেহেতু রাজনীতি করি। মানুষের প্রয়োজনে যখনই ওসি সাহেবকে ফোন দিয়েছি, তিনি আমার কাজটা করে দিয়েছেন। আমি তার মঙ্গল কামনা করি। তারপর বক্তব্য রাখেন ফুলপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম সাজ্জাদুল হাসান। তিনি বলেন, ওসি মামুন সাহেব একজন কুইক রেসপন্স অফিসার। যখনই তাকে ফোন করেছি, যত রাতেই ফোন করেছি তিনি রিসিভ করেছেন। তিনি অত্যন্ত সুদক্ষ একজন ওসি। আমি তার উত্তরোত্তর মঙ্গল কামনা করি। এরপর বক্তব্য রাখেন নবাগত ওসি আবুল খায়ের সোহেল। তিনি বলেন, ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন আমার বন্ধু, আমার ব্যাচমেট, প্রিয় ব্যক্তিত্ব। আমি তার সম্বন্ধে আগে থেকেই জানি। তিনি একজন ভাল মানুষ। কিন্তু আজ এ অনুষ্ঠানে এসে আরও যা জানতে পারলাম তা আমার ধারণার চেয়েও বেশি। আসলে আমি নতুন কিছু হয়তো করতে পারবো না। তবে তার রেখে যাওয়া সম্মানটুকু যাতে ধরে রাখতে পারি সে চেষ্টা করে যাবো।
এরপর ওসি মামুনের সহধর্মিণী বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, নিজের কানে স্বামীর এত প্রশংসা শুনে গর্বে বুকটা ফুলে যায়। আমাদের এলাকাতেও মানুষ বলে যে, তোমাদের পূর্ব পুরুষদের কেউ হয়তো কোন ভাল কাজ করে গেছে; সেজন্য তুমি এত ভাল একজন স্বামী পেয়েছো। বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, আমার স্বামীর জন্য আপনারা দোয়া করবেন। আমার ৩ জন সন্তান আছে। তারা যেন তাদের বাবার মত ভাল মানুষ হতে পারে এজন্য দোয়া করবেন। বিদায়ী ওসি মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ওসি নিজে আসলে কোন কাজই করেন না বরং অন্যদের দিয়ে কাজটা করিয়ে নেন। যাদের দ্বারা কাজটা করিয়ে নেওয়া হয় আজ তাদের অনেকেই এখানে উপস্থিত আছেন। উপস্থিত ভদ্রমন্ডলীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা আজ আমার যেসব গুণের কথা বলেছেন, যেসব প্রশংসা করেছেন, এসব গুণ আমার মাঝে আছে বলে আমার মনে হয় না। তবে আজ থেকে এসব গুণ অর্জনের জন্য আমি চেষ্টা করবো, যাতে পরবর্তী স্টেশনে আমার কাজে লাগে। সকলের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা আমাকে যেভাবে সহযোগিতা করেছেন নবাগত ওসি আমার ব্যাচমেট আবুল খায়েরকেও সেভাবে সহযোগিতা করবেন বলে প্রত্যাশা রইলো। আর তারাকান্দা থানায় আপনাদের চায়ের দাওয়াত রইলো। ওইদিকে গেলে থানায় যাবেন। তাহলে বুঝবো সত্যিই আপনারা আমাকে ভালবাসেন। এরপর বক্তব্য রাখেন সহকারী পুলিশ সুপার (ফুলপুর সার্কেল) মো. আতাহারুল ইসলাম তালুকদার। তিনি বলেন, ওসি মামুন সাহেব মানুষকে সম্মান দিতে জানেন। যিনি মানুষকে সম্মান দেন তিনি সম্মান পাওয়ার যোগ্য। পুলিশি পেশার আড়ালেও তার মধ্যে ছিল নানা গুণের সমাহার। ভিন্নধর্মী মানবিক সাংস্কৃতিক নানা ধরনের কাজের প্রতি তার টান ছিল। তার মধ্যে এমন একটা স্পিরিট বা চুম্বক আছে যা মানুষকে কাছে টানে।
তিনি বলেন, হয়তো পুলিশি অফিসার হিসেবে আমি তাদের বড়, তবে কাজের অভিজ্ঞতায় তারা দুজনই আমার চেয়ে অনেক ম্যাচিউর। ওসি আবুল খায়েরও খুব ভাল মানুষ। আমার বিশ্বাস স্ব স্ব ক্ষেত্রে তারা দুজনই অনেক ভাল করবেন।  দুজনের জন্যই সার্বিক সহযোগিতাসহ ভালবাসা ও দোয়া রইলো। অনুষ্ঠানের একেবারে শেষ পর্যায়ে এসে যোগ দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান। সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি বলেন, ওসি মামুন সাহেবের সাথে আমার আলাদা একটা পরিচয় রয়েছে। যা আগে কখনো বলিনি। তিনি আমার আনন্দ মোহন কলেজে পড়াকালীন ছোটভাই। ওখানে তার ডাকনাম ছিল মুক্তা। খুবই নম্র ভদ্র ও বিনয়ী একজন মানুষ। আসলে যে যতটুকু করে তার ততটুকু মূল্যায়ন করা উচিৎ। তা নাহলে এ সমাজ থেকে ভাল কাজ, ভাল মানুষ, ভাল বিবেক ও ভাল চিন্তাগুলো হারিয়ে যাবে। এসময় তিনি আরও বলেন, আমরা তাকে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে বিদায়ী সংবর্ধনা দিয়েছি। আসলে আওয়ামী লীগ একটা বৃহৎ সংগঠন। এর পক্ষ থেকে বিগত দিনে কোন ওসিকে বিদায়ী সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে কি না তা আমার জানা নেই; মনে পড়ে না। ওসি মামুন সাহেব সেটা অর্জন করেছেন। তাই আমরা তার জন্য এটা করেছি। নবাগত ওসি আবুল খায়েরও একজন ভাল মানুষ। আশা করি তার বিদায়ের সময়ও আমরা এ ধরনের অনুষ্ঠান করতে পারবো। সেটা তিনিই তার কাজের মাধ্যমে আদায় করে নিবেন। সবশেষে সকলের সুস্বাস্থ্য ও মঙ্গল কামনা করে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ এমপির জন্য আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকায় ভোট প্রার্থনা করে তিনি তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্য শেষ  করেন। এরপর ওসিদেরকে ফুলের তোড়া ও ক্রেস্ট উপহার দিয়ে বিদায় ও বরণ করা হয়। এসময় থানার স্টাফসহ বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম আকন্দ প্রিন্স, ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম রাসেল, দেলোয়ার মোজাহিদ সরকার, শাহা আলী, পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সাবেক কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম, সিনিয়র সাংবাদিক এম এ মান্নান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |